দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ, যা আক্রান্ত ব্যক্তির রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়। ডায়াবেটিস পুরোপুরি নিরাময় করা না গেলেও সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এটি কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আজকের নিবন্ধে আমরা দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের কিছু কার্যকরী উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর উপায় অত্যন্ত জটিল হলেও সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসরণ করে নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব। কি খেলে ডায়াবেটিস কমে ও দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো –
ডায়াবেটিস কেন হয়?
মূলত ২ ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে – টাইপ ১ ও টাইপ ২ ৷ টাইপ 1 ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না, অন্যদিকে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে শরীর ইনসুলিনের প্রতি সংবেদনশীলতা হারায়। উভয় ক্ষেত্রেই রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়। ডায়াবেটিসের কারণ গুলির মধ্যে রয়েছে:
- বংশগত কারণ
- স্থূলতা
- শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
- উচ্চ রক্তচাপ
- উচ্চ কোলেস্টেরল।
- খাদ্যতালিকায় আশঁ জাতীয় খাবার কম থাকলে ও চিনির পরিমান বেশি থাকলে।
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উপায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল। নীচে কিছু দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায় রয়েছে –
১. সুষম খাদ্যঃ
জটিল কার্বোহাইড্রেট যেমন ভাত, রুটি, পাস্তা ইত্যাদি খাওয়া যেতে পারে, তবে পরিমাণে সতর্কতা অবলম্বন করুন। গোটা শস্যজাতীয় খাবার খাওয়া ভালো। বিভিন্ন রঙের ফল ও সবজি খেতে হবে। মাছ, মুরগির মাংস, দুধ, দই ইত্যাদি প্রোটিনের ভালো উৎস, যা খেতে পারেন। অলিভ অয়েল, বাদাম, বীজ ইত্যাদি খাওয়া ভালো।
মিষ্টি ও চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন যেমন চকলেট, কেক, বিস্কুট, ফাস্ট ফুড ইত্যাদি খাওয়া এড়িয়ে চলুন। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
২. নিয়মিত ব্যায়ামঃ
দ্রুত ডায়াবেটিস কমানোর একটি উপায় হলো নিয়মিত ব্যায়াম করা। সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি তীব্রতায় ব্যায়াম করুন। আপনি হাঁটা, দৌড়, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যায়াম করতে পারেন। ব্যায়াম ইনসুলিন সংবেদনশীলতা উন্নত করতে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা কমায়। ব্যায়ামের আগে এবং পরে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
৪. ওজন নিয়ন্ত্রণঃ
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
৫. ওষুধঃ
আপনার ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ খান। নিজে থেকে কখনই ওষুধ বন্ধ করবেন না। আর নিজে নিজে কখনই নতুন ঔষধ খাবেন না।
৬. মানসিক চাপ হ্রাস করুনঃ
মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, গভীর শ্বাস প্রশ্বাস ইত্যাদির মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়। প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুমান। তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং সকালে ঘুম থেকে উঠুন। নিয়মিত একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ নিন।
৭. হাইড্রেটেড থাকুনঃ
প্রচুর পানি পান করা আপনার কিডনিকে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত চিনি বের করে দিতে সাহায্য করে। হাইড্রেটেড থাকাও সর্বোত্তম রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সহায়তা করতে পারে। ক্রিয়াকলাপের স্তর এবং জলবায়ুর সাথে সামঞ্জস্য রেখে দিনে কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৮. নিয়মিত শর্করার মাত্রা পর্যবেক্ষণ করুনঃ
দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষণ অত্যাবশ্যক। দিনে একাধিকবার আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে একটি গ্লুকোমিটার ব্যবহার করুন। এই অভ্যাসটি আপনাকে বুঝতে সাহায্য করে যে আপনার শরীর বিভিন্ন খাবার, ক্রিয়াকলাপ এবং ওষুধের প্রতি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। আপনার ডায়াবেটিস এর মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সচেতন থাকতে সাহায্য করে।
আরও পড়ুন – মাথা থেকে চিন্তা দূর করার উপায়
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিগত যত্ন
- পা পরিষ্কার রাখুন এবং নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
- চোখের যত্ন নিন।
- দাঁত পরিষ্কার রাখুন।
- ধূমপান ও মদ্য*পান এড়িয়ে চলুন।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো কি?
ডায়াবেটিসের লক্ষণ হলো – ঘন ঘন প্রস্রাব, বেশি পানি পিপাসা, শরীরে ক্লান্তি ও দুর্বলতা, বেশি বেশি ক্ষুধা লাগা, স্বাভাবিকভাবে খাওয়া সত্ত্বেও ওজন কমে যাওয়া, ক্ষত শুকাতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগা, নানান রকম চর্মরোগ হওয়া, চোখে কম দেখা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া ইত্যাদি।
কতদিন পর পর রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করা উচিত?
সাধারণত দিনে একাধিকবার আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করার পরামর্শ দেওয়া হয়। বিশেষ করে যদি আপনি ইনসুলিন বা অন্যান্য ওষুধ সেবন করেন, যা রক্তে শর্করার কম হতে পারে। নির্দিষ্ট প্রয়োজনের জন্য আপনার ডাক্তার সর্বোত্তম সময়সূচী নির্ধারণ করতে সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনের জন্য কোন ধরনের ব্যায়াম সবচেয়ে ভালো?
অ্যারোবিক ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইকেল চালানো, বা সাঁতার ইত্যাদি সবচেয়ে উপকারী। এই ধরনের ব্যায়াম হৃদপিণ্ড ও ফুসফুসকে সুস্থ রাখে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
মনে রাখবেন, দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রন করা খুবই কঠিন। এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু একটু ধৈর্য ও নিষ্ঠার সাথে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা যায় সহজেই। ডায়াবেটিস দ্রুত নিয়ন্ত্রণ করার জন্য খাদ্যতালিকাগত সমন্বয়, ব্যায়াম, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রন এবং পর্যাপ্ত ঘুমের নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরী।