কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়? ঘরোয়া উপায়
পাতলা পায়খান অনেকের কাছে পরিচিত একটি সমস্যা। খাদ্য দূষণ, পানি দূষণ, কিছু ঔ*ষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অন্য কোনো কারণে পাতলা পায়খান সমস্যা হতে পারে। কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয় এবং পাতলা পায়খানা হলে করণীয় কি জানা না থাকলে অনেক সময় মারাত্নক সমস্যার সম্মূখীন হতে হয়।
পাতলা পায়খান মুক্তি পেতে অনেকেই বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় অবলম্বন করে থাকেন। আজকের পোস্টে পাতলা পায়খানা হলে কি কি খাওয়া যাবে এবং কি কি খাবার খাওয়া যাবে না, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
পাতলা পায়খানা কেন হয়?
- ভাইরাসঃ রোটোভাইরাস, নোরোভাইরাস ইত্যাদি ভাইরাস পাতলা পায়খানার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে।
- ব্যাকটেরিয়াঃ ই-কোলাই, সালমোনেলা এবং দূষিত খাবার বা পানির মতো ব্যাকটেরিয়া খাওয়ার ফলে ডায়রিয়া হতে পারে।
- পরজীবীঃ গিয়ার্ডিয়া, ক্রিপ্টোস্পোরিডিয়াম ইত্যাদি পরজীবী দূষিত খাদ্য বা পানি পানের কারণে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- খাবারঃ অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাধ্য দুধ, দুগ্ধজাত খাবার, ফলমূল, শাকসবজি ইত্যাদি খাওয়া কিছু লোকের পাতলা পায়খানা হতে পারে।
- ঔ*ষুধঃ কিছু ঔষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে Patla Paikhana হতে পারে।
- অ্যালার্জিঃ কোনো খাবার বা পদার্থে অ্যালার্জির কারণে পাতলা পায়খানা হতে পারে।
অন্যান্য কারনের মধ্যে রয়েছে অন্ত্রের সংক্রমণ, আলসারেটিভ কোলাইটিস, ক্রোনস ডিজিজ ইত্যাদি।
আরও পড়ুন – দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়?
পাতলা পায়খান বন্ধ করার জন্য কিছু খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই খাবারগুলো শরীরকে পানি শোষণ করতে এবং মলকে ঘন করতে সাহায্য করে। চলুন জেনে নেই কিছু কার্যকরী খাবার সম্পর্কেঃ
১. ভাতঃ
ভাত একটি সহজপাচ্য খাবার। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে যা শরীরে শক্তি জোগায় এবং মলকে ঘন করে। এটি পাচনতন্ত্রকে উত্তেজিত না করে শক্তির মাত্রা পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করে। ভাত দিয়ে তৈরি খিচুড়ি, ভাত দুধ দিয়ে খাওয়া যায়। যেগুলো সহজে হজম হয় সেগুলো খাবেন।
২. পানিঃ
পাতলা মলের কারণে পানিশূন্যতা হতে পারে। তাই প্রচুর পানি পান করা খুবই জরুরি। পানিশূণ্যতা দূর কারার জন্য ওরস্যালাইন খেতে পারেন। তরল খাবার যেমন চিড়ার পানি, ডাবের পানি, ভাতের মাড় ইত্যাদি খেতে পারেন। আর অবশ্যই নিরাপদ পানি পান করবেন।
৩. আলুঃ
আলুতে রয়েছে পটাশিয়াম যা শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। আলু সেদ্ধ বা ভাজি করে খাওয়া যায়। মশলা ছাড়া সেদ্ধ আলু কার্বোহাইড্রেট এবং পটাসিয়ামের একটি ভাল উৎস দিতে পারে।
৪. গাজরঃ
গাজরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা অন্ত্রকে ঘন করে। গাজরের রস বা গাজর সিদ্ধ করে খাওয়া যেতে পারে। অবশ্যই রান্না করা গাজর খাবেন।
৫. কলাঃ
কলাতে পটাশিয়াম এবং ফাইবার উভয়ই থাকে যা কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাতলা পায়খান দুটিই প্রতিরোধে সাহায্য করে। পাতলা পায়খানার ফলে হারিয়ে যাওয়া ইলেক্ট্রোলাইটগুলি পূরণ করতে সাহায্য করে।
৬. দইঃ
দইতে প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া রয়েছে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং পাতলা পায়খান প্রতিরোধে সাহায্য করে। দই অল্প চিনি দিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি বমির সমস্যা ও ডায়রিয়ার সমস্যাও কমাতে পারে।
আরও পোস্ট – দ্রুত ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করার উপায়
অন্যান্য ঘরোয়া প্রতিকার
- আদা চা: আদা চা পেট ব্যথা কমাতে এবং পাতলা পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- মুড়ি: মুড়ি হালকা এবং সহজে হজমযোগ্য খাবার। তাই এটি নরম পায়খানা বন্ধ করতে সাহায্য করে।
- রুটি: গম থেকে তৈরি রুটি পাতলা পায়খান প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
- বিস্কুট: বিস্কুট সাধারণত হজম করা সহজ এবং Patla Paikhana প্রতিরোধে সাহায্য করে।
- আপনার যদি পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তাহলে যা যা করবেন –
পাতলা পায়খানা হলে করণীয়
আপনার যদি পাতলা পায়খানা হয়ে থাকে তাহলে যা যা করবেন –
১। ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ করা
পাতলা পায়খানার কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি ও লবণ বের হয়ে যায়। তাই ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধে স্যালাইন গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার পানি পান করুন। তরল খাবার যেমন চিড়ার পানি, ভাতের মাড়, ডাবের পানি ইত্যাদি খেতে পারেন।
২। হজমযোগ্য খবার খাওয়া
মলত্যাগের সময় হালকা, সহজে হজমযোগ্য খাবার খান। যেমন: ভাত, বিস্কুট, স্যুপ ইত্যাদি। মশলাদার, তৈলাক্ত এবং গ্যাসযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। দুধ এবং দুগ্ধজাত দ্রব্য কিছু লোকের মধ্যে ডায়রিয়া হতে পারে, তাই সাময়িকভাবে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো।
৩। ঔ*ষুধ
ডায়রিয়া দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকলে বা অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক নিন। শরীর সুস্থ করার জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
৪। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
খাওয়ার আগে এবং বিশ্রামাগার ব্যবহার করার পরে সাবান দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। দূষিত পানি পান এড়িয়ে চলুন। পরিষ্কার খাবার খান।
কিছু প্রশ্ন ও উত্তর
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে কী করব?
শিশুর পাতলা পায়খানা হলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন। পাশাপাশি খাওয়ার স্যালাইন খাওয়ান। বুকের দুধের পাশাপাশি চালের পানি খাওয়াতে পারেন। আর অবশ্যই ডায়াপার পরিষ্কার রাখবেন।
গর্ভবতী মহিলাদের পাতলা পায়খানা হলে কী করা উচিত?
গর্ভবতী মহিলাদের পাতলা পায়খানা হলে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত। ঔ*ষুধ এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট অনুসরণ করা দরকার।
পাতলা পায়খানা কতক্ষণ স্থায়ী হতে পারে?
পাতলা পায়খানার সময়কাল ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত কয়েক দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে এই সমস্যায় ভুগে থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
সম্পর্কিত – মাথা থেকে চিন্তা দূর করার উপায়
আশা করি, কি খেলে পাতলা পায়খানা বন্ধ হয়? ঘরোয়া উপায় ও করণীয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য পেয়েছেন। মনে রাখবেন, পানি পান করা বন্ধ করবেন না। পাতলা পায়খানার সাথে জ্বর, রক্ত, শ্লেষ্মা, তীব্র পেট ব্যথা বা এক সপ্তাহের বেশি এই সমস্যা থাকলে দ্রুত ডাক্তরের পরামর্শ নিবেন।